Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

সুনামগঞ্জে দল পুনর্গঠনে চমক দেখাল সুনামগঞ্জ এনপি

ডেস্ক রিপোর্ট

০৮ জানুয়ারী, ২০২৫

কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ১৬ ইউনিটে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য সফল সমাবেশ করেছে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি। সুনামগঞ্জে বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য বিশেষ করে বিএনপি—আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা। এসব ইউনিটে আহ্বায়ক—যুগ্ম আহ্বায়ক হবার জন্য দলের নির্ধারিত ফরম নিয়েছেন প্রায় চারশ’ জন। আহ্বায়ক হতে প্রতিযোগিতা করছেন দুই থেকে আট জন। দ্বন্দ্ব, মনকষাকষি, প্রতিযোগিতা আছে, কিন্তু সমাবেশের ধরণ দেখে যে কেউ ভাববে— দল এগিয়ে নেবার জন্য সকলে এককাট্রা।
স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতনরা বলছেন, ২৫ বছর ধরে চেষ্টা করেও সুনামগঞ্জের ১৬ ইউনিটে কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলন বা সমাবেশ করতে পারে নি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। ২০২২ সালে উপজেলা ও পৌরসভায় ইউনিট কমিটি গঠনেরউদ্যোগ নিলে প্রথম দিনেই দিরাইয়ের সমাবেশে দুইপক্ষে সংঘর্ষে বাঁধে। সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ঘটে। দলের দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ, আহমেদ হোসেনসহ জেলা নেতাদের লক্ষ্য করে মঞ্চে চেয়ার ছুঁড়ে মারার ঘটনা দেশব্যাপী সমালেচিত হয়। পরে শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুরের আংশিক ইউনিট কমিটি গঠন করে কমিটি গঠনের কার্যক্রম থেকে পিছু হঠেন এই দলের দায়িত্বশীলরা। এর আগে প্রায় ২০ বছর চেষ্টা করেও ছাতক এবং দোয়ারাসহ অনেক ইউনিটে কমিটি গঠনের জন্য সমাবেশ করতে পারে নি আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, দুই মাসের মধ্যে ১৬ ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য সমাবেশ করে রীতিমত চমক দেখাল দলটি। এর আগে কখনো জেলার সকল ইউনিটে বিএনপিও এভাবে বর্ণাঢ্য— সুশৃঙ্খল সমাবেশ করতে পারে নি। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গেল ২৬ নভেম্বর শাল্লা উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য সমাবেশ শুরু করেছিল দলটি। এরপর একে একে সারা জেলায় কমিটি গঠনের সমাবেশ করতে করতে সর্বশেষ সমাবেশ হয়েছে মঙ্গলবার দোয়ারাবাজার উপজেলায়। সমাবেশগুলোতে দলীয় শৃঙ্খলা এতোটাই ছিল যে, কোথাও ‘খালেদা জিয়া— তারেক রহমান’ ছাড়া অন্য কোন স্লোগানই তুলেনি কেউ। সব কয়টি উপজেলায় বলয় আছে, গ্রুপিংও রয়েছে, কিন্তু কোথাও শৃঙ্খলা ভাঙার চেষ্টা করেন নি নেতা কর্মীরা।

উপজেলা পর্যায়ের ইউনিটগুলোর এসব কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন একটিতে, সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী দুইটিতে ও জিকে গৌছ একটিতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যেকটি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছেন সংগঠনের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রেখেছেন, জেলা এবং ছাতক—দোয়ারা নির্বাচনী এলাকায় মিলনের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে পরিচিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী। এসব সমাবেশ সঞ্চালনা করেছেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুল।
শেষ কর্মসূচি দোয়ারাবাজারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রদত্ত্ব ইউনিট কমিটি গঠনে স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য অ্যাড. আব্দুল হক অতিথি ছিলেন। আহ্বায়ক কমিটির নয়া সদস্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন ও যুবদলের সাবেক সভাপতি, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল মুনসুর শওকত বক্তৃতা দিয়েছেন। ভিন্নমতের নেতাদের উপস্থিতিতেও ‘শুদ্ধতায়’ ভরপুর ছিল সমাবেশস্থল। সংগঠনের নেতা কর্মীরা জানেন, নেতৃত্ব পেতে কলিম উদ্দিন মিলন, মিজানুর রহমান চৌধুরী, দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, আবুল মুনসুর শওকত ও অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুলের মধ্যে প্রতিযোগিতা—মতপার্থক্য আছে। কিন্তু সমাবেশে এর আঁচড় লাগে নি। বিএনপির কর্মীরা এই শৃঙ্খলাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

জেলা বিএনপির গেল কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুনাজ্জির হোসেন সুজন বললেন, ‘জেলার ১৬ ইউনিটের সমাবেশ দেখে উজ্জীবিত হয়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। দলের সকল পর্যায়ের নেতারাই এই কৃতিত্বের দাবিদার। আমরা এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করবো সকলে মিলে।’
এদিকে, সংগঠনের ১৬ ইউনিটে আহ্বায়ক ও যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেতে ফরম নিয়েছেন প্রায় চারশ জনের মত তৃণমূল নেতা। এরা এখন নিজেদের মত করে যোগাযোগ রাখছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। আহ্বায়ক পদের জন্য যারা ফরম নিয়েছেন তাদের মধ্যে ছাতকে আলোচনায়, দলীয় নেতা আব্দুর রহমান, নজরুল ইসলাম, ফজলুল করিম বকুল, শফিকুল আলম মতি, ফারুক আহমদ, ফরিদ উদ্দিন ও আবু হুরায়রা ছুরত।

ছাতক পৌরসভায় আহ্বায়ক হতে চান শামসুর রহমান সামছু, সামসুর রহমান বাবুল, জয়নাল আবেদীন মহি ও শহিদুর রহমান সোহেল।


দোয়ারাবাজারে আহবায়ক হতে আগ্রহীরা হলেন— হারুন অর রশিদ, শামসুল হক নমু, আলতাফুর রহমান খসরু, আবু হেনা আজিজ ও আব্দুল মানিক মাস্টার। 

দিরাই উপজেলায় আহ্বায়ক পদ পেতে আগ্রহীদের মধ্যে আলোচনায় দলের নেতা আব্দুর রশিদ চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম ও রশিদ আহমদ বাচ্চু।
দিরাই পৌরসভায় আহ্বায়ক পদ পেতে আগ্রহীদের মধ্যে— আমিরুল ইসলাম ও সুভাস মিয়া এবং বাবুল সর্দারের নাম বেশি আলোচনায়।

শাল্লা উপজেলায় আহ্বায়ক হতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দলের পাঁচ নেতা। এরা হলেন, মাহবুব ছোবহানী চৌধুরী, জাকির হোসেন, আব্দুল্লা আল নোমান, আলী আমজাদ ও নিত্যানন্দ দাস।

তাহিরপুর উপজেলায় দলীয় নেতা আনিসুল হক, কামরুজ্জামান কামরুল, ফেরদৌস আলম, আবুল কালাম আজাদ, আবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ ও গোলেনূর আলী আহ্বায়ক পদ পেতে আগ্রহী। তারা সকলেই ফরম কিনেছেন।



জামালগঞ্জ উপজেলায় দলীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম, আজাদ হোসেন বাবলু, মোহাম্মদ আলী, শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম বিন বারী, আবুল খায়ের, আব্দুল খালিক ও মদরিছ আলী আহ্বায়ক হতে চান। 

মধ্যনগর উপজেলায় আব্দুল হামিদ, ফজলুল হক, আব্দুল জলিল ও আবুল হায়াৎ ফরম কিনেছেন।

ধর্মপাশা উপজেলায় কাজী মাজহারুল হক, আখতারুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, ইকবাল হোসেন মন্টু ও নুরুল ইসলাম বিএসসি কিনেছেন আহ্বায়ক পদ পেতে ফরম।

জগন্নাথপুর উপজেলায় আবু হুরায়রা ছাদ মাস্টার ও লুৎফুর রহমান চৌধুরী আহ্বায়ক হতে চান।
জগন্নাথপুর পৌরসভা বিএনপিতে অ্যাড. জিয়াউর রহিম শাহীন নিজাম উদ্দিন এবং আবিবুল বারী আয়হান আহ্বায়ত পদ চান।

শান্তিগঞ্জে আহ্বায়ক পদ পেতে ফরম কিনেছেন, ফারুক আহমদ, আনছার উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, আউয়াল উদ্দিন, রওশন খান সাগর, ছলিম নূর বাচ্চু ও সোহেল মিয়া। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আহ্বায়ক পদ পেতে ফরম কিনেছেন, দলীয় নেতা আকবর আলী, আসম খালেদ ও কাজী নাসিম উদ্দিন লালা।

সুনামগঞ্জ পৌর সভায় আহ্বায়ক পদে ফরম কিনেছেন, অ্যাড. শেরেনুর আলী, রেজাউল হক, আব্দুল্লা আল নোমান ও শোয়েব আহমদ।
জেলা বিএনপির ইউনিট কমিটি গঠনে স্বাক্ষর প্রদানকারী সদস্য অ্যাড. আব্দুল হক বললেন, সকল ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সমাবেশ হয়েছে। সম্প্রতি আহ্বায়ক কমিটিতে নতুন ছয়জন সদস্যকে যুক্ত করা হয়েছেন, তারাসহ পুরো আহ্বায়ক কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কীভাবে পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যায়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বললেন, ‘গেল ১৫ বছর নেতা কর্মীরা ঘর ছাড়া ছিলেন, নির্যাতিত হয়েছেন। এখন নতুন পরিস্থিতিতে এগুচ্ছি আমরা। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষে সমাবেশে সকলে আন্তরিক ছিলেন। তৃণমূল থেকে জেলা নেতৃবৃন্দ সকলের মধ্যে টিমওয়ার্ক ছিল, এজন্য সুশৃঙ্খলভাবে সকল ইউনিটে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সমাবেশ করে দলকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করছি আমরা।’

কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বললেন,‘আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উদ্দীপনা দিয়েছেন, পথ দেখাচ্ছেন, আমরা নতুন বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করেছি, নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে দেশকে এগিয়ে নেবার চিন্তাই কাজ করছে বেশি, দলের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করতে চান তারা। এজন্যই সুনামগঞ্জের ১৬ ইউনিটে এভাবে সফল প্রোগ্রাম সম্ভব হয়েছে।


Post a Comment

0 Comments